আন্দোলন এবং দাওয়ার ক্ষেত্রে আকীদাগত মতপার্থক্যকে কে কতোটা গুরুত্ব দেয়া উচিত

হাকীমুল উম্মাহ
শায়খ আইমান আল-যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহ

আমাদের অবস্থান হল আকীদাগত পার্থক্যের (কে আশারী, কে মাতরুদী, কে আত’হারী) প্রতি মনোনিবেশ না করা, কেননা তা উম্মাহ-র সাধারণদের জন্য বোধগম্য নয়, যেমন- কোন ব্যক্তি একজন মাতরুদি অথবা এই ব্যক্তি আশ’আরী বা ইনি একজন সালাফি। এই বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মুসলিমদের অবস্থান ইনসাফের সাথে দেখা হল আমাদের অবস্থান, কেননা কোন দলের আকীদা এর মধ্যে হয়তো কিছুক্ষেত্রে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে কিংবা কোন দলের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে অথচ তাদেরই হয়ত জিহাদ ও আল্লাহর পথে বিসর্জনের ক্ষেত্রে অনেক কিছুই দেয়ার আছে।

আফগান জিহাদে আমরা এর অসাধারণ উদাহরণ দেখেছি আমীরুল মু’মীনীন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমার (হাফিযাহুল্লাহ) এর মাঝে- উনি হানাফী মাযহাব এবং মাতরুদী আকীদার এর অনুসারী, অথচ তিনি যে ভূমিকা গ্রহণ করেছেন তা ইসলামের ইতিহাসে বিরল। জিহাদ চলাকালীন সময়ে শাসকদের সম্পর্কে ও মুসলিমদের পবিত্র স্থান সম্পর্কে হকপন্থী উলামাদের মতামত কি তা সম্পর্কে অবগত থাকলে জিহাদের নেতৃবৃন্দ সমৃদ্ধশালী এবং উপকৃতই হবেন। এবং এই ব্যাপারগুলোর ক্ষেত্রে জিহাদ চলাকালীন সময়ে মানুষের প্রতি ইনসাফের পরিচয় দেয়া এবং তাঁদের যোগ্যতা অস্বীকার না করার ব্যাপারে উলেমাদের বক্তব্যও জিহাদের ক্ষেত্রে আমাদের আরো উপকৃত এবং সমৃদ্ধশালী করবে।

সাধারন মানুষের কাছে উলামারা হলেন ইসলামের প্রতীক এবং নিদর্শন। তাঁদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে তা সাধারণ মানুষের কাছে দ্বীন ও এর আনুসঙ্গিক ব্যাপারগুলোকে গুরুত্বহীন করে তুলতে পারে। এভাবে কোন বিচ্যুতি বা নির্দিষ্ট কোন ব্যাপারকে সমালোচনা করা হলে তা উপকারের চেয়ে বরং অনেক বেশি ক্ষতিসাধন করে। অবশ্য আমার এসব কথা মুনাফিক বিশ্বাসঘাতকদের জন্য নয়, যারা কিনা ক্রুসেডারদের সাথে আঁতাত করেছে, আমি বরং জোর দিয়ে সাধারণ জনগণের সামনে উলামাদের ছোট করার বিরুদ্ধে এসব কথা বলছি।

একইভাবে সক্রিয় মুজাহিদীন উলামাদের যদি এসব আকীদাগত বিষয়ে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকেও থাকে যেগুলো কুফর অথবা রিদ্দার অন্তর্গত না তাহলেও আমাদের উচিত তাদেরকে আমাদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের ইলম এবং সক্রিয়তা দ্বারা নিজেদের আন্দোলনকে উপকৃত করা। আমরা সবাই জানি- ইসলামের অনেক জ্ঞানী উলামাই ছিলেন আশ’আরী-যেমন, ইয্‌ বিন আবদুল সালাম, আল-নাওয়ায়ী এবং ইবনে হাজার আল আসকালানী (আল্লাহ তাঁদের উপর রহমত বর্ষণ করুন)। আর উম্মাহ-র মহান মুজাহিদদের মধ্যে অনেকেই, যাদেরকে উম্মাহ সর্বসম্মতিক্রমে প্রশংসা করে যেমন, নূর আল-দ্বীন বিন জাঙ্গী এবং সালাউদ্দীন আল আয়ূবী ছিলেন আশ’আরী। তাদের উত্তরসূরী মুজাহিদীন সুলতানগণ, যারা হয়ত পূর্ববর্তীদের সমকক্ষ হতে পারেননি কিন্তু উলামা ও ঐতিহাসিকদের প্রশংসা পেয়েছেন- যেমন সাঈফ আল দ্বীন কুতুয, রুকন আলদ্বীন বাইবারস, আল নাসির মুহাম্মাদ বিন ক্বাল্লাউন, মুহাম্মাদ আল ফাতিহ- উনারা সকলেই ছিলেন আশ’আরি বা মাতরুদি। তাদের অনেকের মধ্যেই ভুল-ত্রুটি ছিল, তাঁরা কিছু কিছু গুনাহ করেছেন এবং সীমালঙ্ঘন করেছেন, কিন্তু তা সত্তেও জিহাদের ক্ষেত্রে তাঁদের মহান ভূমিকা আমরা প্রশংসার সাথেই স্মরণ করি। আর আল নাসির মুহাম্মাদ বিন ক্বাল্লাউন এর ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যার[রাহিমাহুল্লাহ] অবস্থান সম্পর্কে আমরা জানি। শাইখের উপর জেল-জুলুম করা সত্ত্বেও শাইখতার প্রশংসা করেছেন ও তাকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।

আমাদের এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বর্তমানে উম্মাহর অধিকাংশ উলামাই আশ’আরী বা মাতরুদী এবং যেকোন আকীদার ভুল সংশোধন করা এমন একটা ব্যাপার যার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘদিনের দাওয়াহ [generations of call ] এবংপাঠ্যসূচির পরিবর্তন করা। অথচ মুজাহিদীনদের পক্ষে এই কাজের গুরুভার বহন করা সম্ভব না, কারণ তাঁরা জিহাদ নিয় ব্যস্ত, বরং মুজাহেদীন বর্তমান সময়ে যেসব সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন সেসব সমাধানের জন্য তাঁদের সাহায্য প্রয়োজন। এই সবকিছু বিবেচনা করলে এবং সালাফী বা সালাফী নন এমন সকল মুসলিমই জিহাদের কথা বলছেন- এটা মাথায় রাখলে আমরা বুঝতে পারব যে মুজাহিদ বাহিনীর দায়িত্ব হল জিহাদের জন্য উম্মাহর সকল ধরনের শক্তিকে ব্যবহার করা। তাদের দায়িত্ব হল সাধ্যমত প্রজ্ঞা ও সতর্কতা ব্যবহার করে নেতা ও পথপ্রদর্শক খুঁজে নেওয়া, উম্মাহর সকল শক্তি ও সামর্থ্য ব্যবহার করে সকলের অভিন্ন লক্ষ্য পূরণ করা, যা হল- রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মানহাজে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা বি ইয্‌নিল্লাহ।
পারিপার্শ্বিক বাস্তবতাঁকে উপেক্ষা করার ভুলের কারণে জিহাদের আন্দোলন ভেঙ্গে পড়ুক অথবা ক্ষতিগ্রস্থ হোক, এটা কোন অবস্থাতেই আমরা চাই না।

Leave a comment